,

ব্যারিকেড ভেঙে ব্যারাজ দিয়ে চলছে ভারী যান

নীলফামারী প্রতিনিধি: ভারী যানবাহন চলাচল ঠেকাতে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের প্রবেশমুখে স্থাপিত লোহার রড ভেঙে ফেলা হয়েছে। অথচ সেখানে আছে পুলিশ ফাঁড়ি ও আনসার ক্যাম্প।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াও সেখানে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। প্রবেশ মুখের ব্যারিকেড ভেঙে চলছে পাথরবোঝাই ৪০ মেট্রিক টন ওজনের ট্রাক। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলছে এসব ভারী যান।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভারী যানবাহন চলাচলের সুযোগ দিয়ে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। এ নিয়ে তিস্তা ব্যারাজের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

জানা যায়, নীলফামারী-লালমনিরহাট জেলার সীমানা ডালিয়া ও দোয়ানীতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ। এটি চালু হওয়ার পর রাজস্ব আদায়ে তিস্তা ব্যারাজ দিয়ে যানবাহন পারাপারে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০০১ সালে ব্যারেজের ওপর দিয়ে ২০ টনের নিচে সব যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। সেই থেকে প্রতিবছর সরকার রাজস্ব আয় করতো কোটি টাকার ওপরে। কিন্তু টোল আদায়ের ঠিকাদার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে টাকার বিনিময়ে ৩০ থেকে ৩৫ টনের বেশি ওজনের ভারী যানবাহন চলাচলের সুবিধা করে দেয়। এতে ব্যারাজে দেখা দেয় ফাটল ও ৪৪টি মূল জলকপাটগুলোতে অপারেটিংয়ে দেখা দেয় সমস্যা।

তিস্তা ব্যারাজ রক্ষার্থে ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে ব্যারেজের ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে টোল আদায় বন্ধ করা হয়। ব্যারাজের উভয় পাশের গেটের মূল সড়কে রিকশা-ভ্যান, কার, মাইক্রোবাস পারাপারের সুবিধায় ৭ ফিট ৮ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে লোহার পাইপ বসিয়ে রাস্তা সংকীর্ণ করা হয়। যাতে ট্রাক ও বাস চলাচল করতে না পারে। ফলে বুড়িমারী থেকে বিভিন্ন ভারী যানবাহন পাটগ্রাম হাতীবান্ধা লালমনিরহাট হয়ে তিস্তা সেতু দিয়ে চলাচল করে আসছিল। দীর্ঘদিন ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার পর হঠাৎ করে ভারী যনবাহন চলাচল শুরু করে।

এলাকাবাসী জানায়, তিস্তা ব্যারাজের উভয় পাশের লোহার পাইপ ভেঙে পুনরায় চলাচল শুরু করে ভারী যান। কর্মকর্তা ও কর্মচারী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের যোগসাজশে ব্যারাজের ওপর দিয়ে যানবাহন চলছে। লালমনিরহাট হয়ে না গিয়ে তিস্তা ব্যারাজ অতিক্রম করে নীলফামারী হয়ে সারা দেশে যাচ্ছে বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথরসহ বিভিন্ন পণ্যবোঝাই ট্রাক। ফলে তিস্তা ব্যারাজের জলকপাট অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষতিসহ ব্যারাজের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়।

ট্রাকচালকরা জানান, টাকা ছাড়া ব্যারাজে পাথরবোঝাই গাড়ি তোলা সম্ভব নয়। ট্রাক প্রতি এক হাজার করে টাকা দিলেই বাঁধা নেই। তিস্তা ব্যারাজ হয়ে চলাচল করলে তিস্তাসড়ক সেতুর টোল ও রাস্তার দূরত্ব কমে, অতিরিক্ত জ্বালানিও বেঁচে যায়।

তিস্তা ব্যারাজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ আবু সাঈদ বলেন, লোহার পাইপের মাঝ দিয়ে ছোট ছোট ট্রাক চলাচল করে। তবে লোহার পাইপ কারা কীভাবে ভেঙেছে তা আমার জানা নেই।

তিস্তা ব্যারাজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আফওয়াজুল ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদন অনুযায়ী ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করে। তবে পাথরের ট্রাক চলাচলের কোনো সুযোগ নেই।

তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা হাফিজুল হক বলেন, সরকারিভাবে ভারী যাহবাহন চলাচল বন্ধ রাখা রয়েছে। রাতের আঁধারে একটি চক্র ট্রাক পরিবহনের সুযোগ পাচ্ছে; বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর